Ganesh Chaturthi: গণেশ চতুর্থীর মাহাত্ম্য ও ভগবান গনেশের জন্ম লীলা!

Ganesh Chaturthi: গণেশ চতুর্থীর মাহাত্ম্য ও ভগবান গনেশের জন্ম লীলা!

ণেশ চতুর্থী হল ভগবান গণেশের জন্মোৎসব, যা সারা ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ উৎসাহ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। ভগবান গণেশ হলেন হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা, যিনি বিদ্যা, জ্ঞান, সমৃদ্ধি এবং শুভবুদ্ধির প্রতীক। তাঁকে সব কাজের সূচনায় পূজা করা হয় এবং তিনি বিঘ্ননাশক বা বাধা দূরকারী হিসেবে পরিচিত। তাই Hindu Express points এর টিম আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে গণেশ চতুর্থীর মাহাত্ম্য ও ভগবান গণেশের জন্ম লীলার ইতিহাস। ভগবান গনেশের জন্মলীলার ঘটনা সনাতন ধর্মের শাস্ত্রে বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে, যা মূলত শিব পুরাণ, এবং স্কন্দ পুরাণ, সহ বিভিন্ন পবিত্র গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই লীলা শুধু ভগবান গণেশের সৃষ্টি কাহিনীই নয়, এতে গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় শিক্ষা লুকিয়ে রয়েছে। তাই আর দেরি না করে মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পাঠ করুন।

Ganesh Chaturthi: গণেশ চতুর্থীর মাহাত্ম্য ও ভগবান গনেশের জন্ম লীলা!
গণেশ চতুর্থীর মাহাত্ম্য ও ভগবান গনেশের জন্ম লীলা

ভগবান গণেশের জন্মের আদি (কাহিনী) লীলা

শিব পুরাণ অনুযায়ী, একদিন দেবী পার্বতী তাঁর গৃহের বাইরে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেই ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখনই তিনি তাঁর মনের চিন্তা অনুযায়ী মাটি ও তিলক পেস্ট দিয়ে একটি মূর্তি নির্মাণ করেন এবং তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মূর্তিই গণেশ। তিনি গণেশকে তাঁর ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তাঁকে আদেশ দেন যে তিনি গৃহের বাইরে প্রহরী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবেন, যেন কেউ ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।

কিছুক্ষণ পর ভগবান শিব সেখানে আসেন এবং ঘরে প্রবেশ করতে চান, কিন্তু ছোট গণেশ তাঁকে প্রবেশ করতে বাধা দেন। গণেশের এহেন আচরণে শিব ক্রুদ্ধ হন এবং উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই ঘটনা দেখে দেবতাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু গণেশ শিবের অনুমতি না মেনে নিজের কর্তব্য পালন করতে থাকেন। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে শিব তাঁর ত্রিশূল দিয়ে গণেশের মাথা ছিন্ন করেন।

আরো পড়ুনঃ- কেন সিদ্ধিদাতা গণেশ কে একদন্ত" বা এক দন্তবিশিষ্ট ভগবান বলা হয়?

দেবী পার্বতী যখন এই ঘটনা জানতে পারেন, তিনি ভীষণ ক্রুদ্ধ ও শোকাহত হন এবং সমস্ত সৃষ্টির ওপর অভিশাপ দেন। সৃষ্টিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দেবতারা শিবের শরণাপন্ন হন। শিব তখন পার্বতীকে শান্ত করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন যে গণেশকে পুনরায় জীবিত করবেন।
শিব দেবতাদের আদেশ দেন এমন একটি প্রাণীর মাথা আনতে যা উত্তর দিকে মুখ করে শুয়ে থাকে। 

দেবতারা হাতির শাবকের মাথা নিয়ে আসেন, এবং শিব সেই মাথাটি গণেশের শরীরে স্থাপন করে তাঁকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তখনই গণেশের নাম রাখা হয় গজানন, অর্থাৎ যিনি হাতির মতো মাথা ধারণ করেন।
ভগবান গণেশের জন্মলীলার কাহিনী শুধু একটি ধর্মীয় আখ্যান নয়, এটি এক অসাধারণ আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক শিক্ষা বহন করে। তাঁর জন্মের প্রতিটি পদক্ষেপই মানবজাতির জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস, যা আমাদের শুদ্ধ মনোভাব এবং ধার্মিক পথে পরিচালিত করে।

গণেশ ঠাকুরের ছবি|photo: Pixabay

গণেশ চতুর্থীর মাহাত্ম্য:

এখানে গণেশ চতুর্থী সম্পর্কিত পাঁচটি উদাহরণ দেওয়া হল যেগুলো পাঠ করলে আপনারা বুঝতে পারবেন গণেশ চতুর্থী কেন পালন করা হয়।

  1. সকল কাজের শুরুতে গণেশ পূজা: হিন্দু ধর্মে যে কোনও শুভ কাজ শুরুর আগে ভগবান গণেশের পূজা করা হয়, কারণ তিনি বিঘ্নহর্তা। গণেশ চতুর্থী সেই উৎসব, যেখানে গণেশকে সম্বোধন করে জীবন থেকে সমস্ত বাধা দূর করার প্রার্থনা করা হয়।
  2. জ্ঞান ও বিদ্যার দেবতা: গণেশকে জ্ঞান ও বিদ্যার অধীশ্বর বলে মনে করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এই দিনে গণেশের পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ তাঁরা বিশ্বাস করেন, গণেশের কৃপায় তারা পড়াশোনায় সফলতা লাভ করবে।
  3. ধন ও সমৃদ্ধির জন্য পূজা: ভগবান গণেশ ধন-সম্পদেরও অধিপতি। ব্যবসায়ী এবং গৃহস্থরা এই দিনে গণেশের আশীর্বাদ কামনা করে যাতে তাঁদের পরিবারে সুখ, শান্তি, এবং সমৃদ্ধি আসে।
  4. বৈষ্ণব ও শৈব ধর্মের মিলন: ভগবান গণেশের পূজা শুধু শৈব অনুসারীরা নয়, বৈষ্ণব ও অন্যান্য ধর্মানুসারীরাও করেন। গণেশ চতুর্থীর মাধ্যমে সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে ঐক্যের বার্তা প্রদান করা হয়।
  5. আধ্যাত্মিক শুদ্ধিকরণ: এই দিনে গণেশের আরাধনা করলে মানুষের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক শুদ্ধিকরণ হয়। ভগবান গণেশ বিঘ্ন নাশ করে আত্মার শুদ্ধি ঘটান এবং জীবনের পথকে মসৃণ করে তোলেন।

গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠান ও উৎসবগুলি কি?

গণেশ চতুর্থীতে বিভিন্ন জায়গায় গণেশ মূর্তি স্থাপন করা হয় এবং বাড়িতে বা মণ্ডপে ভক্তিভরে তাঁর পূজা করা হয়। পূজার সময় মন্ত্রপাঠ, গণেশ স্তোত্র পাঠ এবং বিভিন্ন ধরণের নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। গণেশ চতুর্থী সাধারণত দশ দিন ধরে চলে এবং দশম দিনে ভগবান গণেশের মূর্তিকে বিসর্জন দেওয়া হয়, যা ভক্তি ও আনন্দের পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

গণেশের সর্বপ্রথম পূজ্য হওয়ার আশীর্বাদ:

গণেশের পুনর্জন্মের পর শিব তাঁকে আর্শীবাদ দেন যে তিনি সকল শুভ কাজের শুরুতে সর্বপ্রথম পূজিত হবেন। গণেশ পরিণত হন সমস্ত বিঘ্ননাশক এবং জীবনের শুভ সূচনার প্রতীক হিসেবে। তিনি প্রথম পূজ্য দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এবং তাঁর পূজা ছাড়া কোনো শুভ কাজ শুরু করা হয় না।


গণেশ চতুর্থীর আধ্যাত্মিক শিক্ষা:

গণেশের জন্মলীলার মধ্যে লুকিয়ে থাকা শিক্ষাটি অত্যন্ত গভীর। এটি আমাদের শেখায় আনুগত্য, কর্তব্যপরায়ণতা এবং আত্মত্যাগ। গণেশ যেমন তাঁর মায়ের আদেশ পালন করে কোনো বাধা বা ভয়কে পরোয়া করেননি, তেমনি আমাদেরও জীবনে কর্তব্য পালনে অবিচল থাকতে হবে। পাশাপাশি, এই কাহিনী শিখায় যে সমস্ত সৃষ্টি মহান ঈশ্বরের ইচ্ছায় পরিচালিত হয় এবং তাঁর অনুগ্রহ ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।

Ganesh images, ছবি: Pixabay 

FAQ

 গণেশ চতুর্থী মানে কি?

গণেশ চতুর্থী হল ভগবান গণেশের জন্মোৎসব, যা সারা ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ উৎসাহ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। ভগবান গণেশ হলেন হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা, যিনি বিদ্যা, জ্ঞান, সমৃদ্ধি এবং শুভবুদ্ধির প্রতীক। তাঁকে সব কাজের সূচনায় পূজা করা হয় এবং তিনি বিঘ্ননাশক বা বাধা দূরকারী হিসেবে পরিচিত।

 গণেশ চতুর্থীর গুরুত্ব কি?

 হিন্দু ধর্মে গণেশ চতুর্থীর গুরুত্ব অপরিসীম। ভগবান গণেশকে আইন, প্রজ্ঞা এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং তাঁর পূজা ভক্তদের জন্য সাফল্য এবং সুখ নিয়ে আসে।

গণেশকে কোন ফুল দেওয়া হয়?

হিবিস্কাস ফুল তার প্রিয় ফুল হিসাবে ভগবান গণেশের পূজায় একটি বিশেষ স্থান ধারণ করে। যাইহোক, অন্যান্য ফুল যেমন কুন্ড, গোকর্ণ, গাঁদা, সেবন্তী, পারিজাথা এবং আরালীও তাকে খুশি করার জন্য এবং তার আশীর্বাদ পেতে দেওয়া হয়।

গণেশের প্রিয় ফুল কি?

গাঁদা: প্রভু গণেশ সাধারণত লাল ফুল দেওয়া সত্ত্বেও হলুদ জাফরান গাঁদা (গেন্ডা) ফুল পছন্দ করেন।

গণেশ ঠাকুরের প্রিয় রং কি?

গণেশ ঠাকুরের প্রিয় রঙ লাল

সমাপ্ত


গণেশ চতুর্থী শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভক্তি, বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির উদযাপন। এই দিনে ভগবান গণেশের কৃপা লাভের মাধ্যমে জীবনের সমস্ত বাধা অতিক্রম করার অনুপ্রেরণা লাভ করা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ