শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলা: জানুন গোপাল ও কুমোরের ইচ্ছে নিয়ে কাহিনী!

জানুন গোপাল ও কুমোরের ইচ্ছে নিয়ে কাহিনী!

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবন, অসংখ্য লীলা এবং আধ্যাত্মিক কাহিনীতে পরিপূর্ণ। তার প্রতিটি লীলা ভক্তি, প্রেম, এবং মানবতাবাদের গভীর তাৎপর্য বহন করে। এরকমই একটি গল্প হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং একজন সাধারণ কুমোরের মধ্যকার সম্পর্কের কাহিনী, যা শ্রীকৃষ্ণের ভক্তদের জন্য এক অনন্য শিক্ষার প্রতীক।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও মা যশোদার ছবি

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও কুমোরের গল্পের সূচনা~

একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার সখাদের সাথে নিয়ে,    গোপীদের মাখন ভর্তি হাঁড়ি ফাটিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে মাখন চুরি করে খেয়ে নেন। গোপীরা এতে বড়ই অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন এবং তারা একত্রে মা যশোদার কাছে অভিযোগ করতে গেলেন।

গোপীরা এসে যশোদাকে বললেন, "মা, তোমার ছেলে আবারও আমাদের হাঁড়ি ফাটিয়ে দিয়েছে। সমস্ত মাখন চুরি করে খেয়ে নিয়েছে। তুমি তোমার ছেলেকে একটু শাসন করো, নাহলে এমনটা প্রতিদিনই চলতে থাকবে।"
প্রতিদিন একই অভিযোগ শুনতে শুনতে মা যশোদার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। রাগে তিনি একটি লাঠি তুলে নেন এবং কৃষ্ণকে শাসন করার জন্য তার পেছনে দৌড়াতে শুরু করেন। প্রভু মাকে রাগান্বিত অবস্থায় দেখে নিজেকে রক্ষা করতে দৌড়াতে লাগলেন।

ছুটতে ছুটতে শ্রী কৃষ্ণ এক কুমোরের কাছে পৌঁছলেন।  কুমার তার মাটির হাঁড়ি বানাতে ব্যস্ত।  কিন্তু কুমোর শ্রীকৃষ্ণকে দেখার সাথে সাথে খুব খুশি হলেন।  কুমোর জানতেন যে শ্রী কৃষ্ণ মানব ব্যক্তিরূপে ভগবান।  তখন ভগবান কুমোরকে বললেন, 'কুমোরজী, আজ আমার মা আমার উপর খুব রেগে আছেন।  মা লাঠি নিয়ে আমার পিছু পিছু আসছেন।  ভাই, আমাকে কোথাও লুকান।
তখন কুমার শ্রীকৃষ্ণকে একটি বড় পাত্রের নিচে লুকিয়ে রাখলেন।  কিছুক্ষণের মধ্যে মা যশোদাও সেখানে এসে কুমোরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, এই যে কুমোর!  আমার কানহাইয়াকে কোথাও দেখেছ?
কুমোর বলল- 'না মা!  আমি কানাইয়া কে দেখিনি।
তখন শ্রীকৃষ্ণ একটা বড় কলসীর নিচে লুকিয়ে এসব কথা শুনছিলেন। মা সেখান থেকে চলে গেলেন।
এখন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কুমোরকে বলছেন - কুমোর-জী, মা যদি চলেই যান, তবে আমাকে এই পাত্র থেকে বের করে দিন।

আরো পড়ুনঃ- কেন সিদ্ধিদাতা গণেশ কে একদন্ত" বা এক দন্তবিশিষ্ট ভগবান বলা হয়?

কুমোর বলল- 'এমন নয় প্রভু!  প্রথমে আমাকে চুরাশি লাখ যোনির  দাসত্ব থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দাও।
ভগবান তখন মুচকি হেসে বললেন - 'ঠিক আছে, আমি তোমাকে চুরাশি লক্ষ জন্ম থেকে মুক্তি দেবার প্রতিজ্ঞা করছি। এখন আমাকে বের করে দাও।
কুমার বলল- 'আমি একা নই, প্রভু!  তুমি যদি আমার পরিবারের সকলকে চুরাশি লক্ষ প্রজাতির বন্ধন থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দাও, তবে আমি তোমাকে এই পাত্র থেকে বের করব।

প্রভুজি বলেন - 'ঠিক আছে, আমি তাদের চুরাশি লক্ষ জন্মের বন্ধন থেকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করছি।
এবার আমাকে পাত্র থেকে বের করে দাও।
এখন কুমার বলে- 'যথেষ্ট হয়েছে, প্রভু!  আরো একটি অনুরোধ আছে.  তুমি যদি তাও পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দাও, আমি তোমাকে পাত্র থেকে বের করে দেব।
ভগবান বললেন- সেটাও বলো, তুমি কি বলতে চাও?'
কুমোর বলিতে লাগিল- 'প্রভু!  যে পাত্রের নিচে তুমি লুকিয়ে আছ তার মাটি আমার বলদের উপর বোঝাই করা হয়েছে। আমার এই ষাঁড়গুলোকে ও চৌরাশির দাসত্ব থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দাও।

ভগবান কুমারের প্রেমে সন্তুষ্ট হন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে সেই ষাঁড়গুলিকেও চৌরাশির দাসত্ব থেকে মুক্ত করবেন।
ভগবান বললেন- 'এখন তোমার সব মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়েছে, এবার আমাকে পাত্র থেকে বের কর।'
তখন কুমোর বলে- 'এখন নয় প্রভু!  আর একটা শেষ ইচ্ছা।  তাও পূর্ণ কর এবং তা হল- যে কোন জীব আমাদের মধ্যকার এই কথোপকথন শুনবে, তুমি তাকেও চুরাশি লক্ষ জন্মের বন্ধন থেকে মুক্ত করবে।  শুধু আমাকে এই প্রতিশ্রুতি দাও এবং আমি তোমাকে এই পাত্র থেকে বের করে দেব।

আরো পড়ুনঃ- কে ছিলেন শ্রীরামের একমাত্র বোন? জানুন সেই অজানা কাহিনী!

কুমারের প্রেমময় বাণী শুনে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ খুব খুশি হলেন এবং কুমারের এই ইচ্ছা টাও পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
তখন কুমার শিশু শ্রী কৃষ্ণকে পাত্র থেকে বের করে আনলেন। এবং তিনি পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীচরণে প্রণাম করল। ভগবানের চরণ ধুয়ে চরণামৃত গ্রহণ করলেন।  তিনি তার কুঁড়েঘরে চরণামৃত ছিটিয়ে দিলেন এবং ভগবানকে জড়িয়ে ধরে এত কাঁদলেন যে তিনি প্রভুতে মিশে গেলেন।

শ্রীকৃষ্ণ এই গল্পটি থেকে আমাদের কি শিক্ষা দিয়েছেন?

একটু ভেবে দেখুন, শিশু শ্রী কৃষ্ণ যদি সাত ক্রোশ দীর্ঘ গোবর্ধন পর্বতকে এক আঙুলে সাত দিন তুলে ধরতে পারে, তাহলে তিনি কি একটি সামান্য মাটির কলস ও তুলতে পারতেন না?
আসলে এটা ভগবানের তার ভক্তের  প্রতি প্রেম, ছাড়া আর কিছুই না। যতই যজ্ঞ, আচার-অনুষ্ঠান, যতই দান, যতই ভক্তিই করুন না কেন, অন্তরে জীবের প্রতি ভালবাসা না থাকলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করা যায় না।


আরো পড়ুনঃ- সকল পৌরাণিক কাহিনী


Hindu Express Points, এর এই আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, এবং আর্টিকেলটি শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ