Krishna Janmashtami: শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য ও জন্ম লীলা!

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য ও জন্ম লীলা

শ্রীকৃষ্ণ, হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা এবং ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার, যিনি সত্য ও ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্মদিন, যা "জন্মাষ্টমী" নামে পরিচিত, প্রতিটি ভক্তের জন্য একটি অত্যন্ত পবিত্র এবং শুভ দিন। জন্মাষ্টমী শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উদযাপন নয়, এটি ধর্ম, ন্যায়, এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতি তার অবিচল বিশ্বাসের প্রতীক। তাই জন্মাষ্টমী উপলক্ষে Hindu Express points এর টিম আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য ও জন্ম লীলা সংক্রান্ত এই আর্টিকেল, তাই আর দেরি না করে এখনি আর্টিকেলটি ভক্তি সহকারে পাঠ করুন। 

krishna janmashtami images

মূল বিষয়বস্তু

  • শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য
  • শ্রীকৃষ্ণের জন্ম লীলা
  • জন্মাষ্টমীর সার্থকতা
  • ধর্ম এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা
  • ভক্তির প্রতি অঙ্গীকার
  • জীবনের মূল্যবোধের উপলব্ধি
  • আনন্দ এবং উৎসবের মাধ্যম
  • উপসংহার

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য~

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের দিন, যা ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে উদযাপিত হয়। এই দিনটি হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র এবং মহিমান্বিত হিসেবে বিবেচিত। জন্মাষ্টমী উদযাপন ভক্তদের জন্য একটি আধ্যাত্মিক উপলক্ষ, যা শ্রীকৃষ্ণের লীলা, ধর্ম প্রতিষ্ঠা এবং মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য তার আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আনন্দে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা এবং তার আধ্যাত্মিক বার্তাগুলিকে মনে করার এবং সেগুলির চর্চা করার একটি উপলক্ষ। ভক্তরা উপবাস পালন করেন, গীতার পাঠ করেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম জপ করেন এবং রাত জেগে তার লীলার কাহিনী শ্রবণ করেন।

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম লীলা~

দ্বাপর যুগে ভোজবংশী রাজা উগ্রসেন মথুরায় রাজত্ব করতেন। তার অত্যাচারী পুত্র কংস তাকে সিংহাসন থেকে অপসারণ করে এবং নিজেই মথুরার রাজা হন। কংসের একটি বোন দেবকী ছিল, যার বিয়ে হয়েছিল বাসুদেব নামে এক যদুবংশী প্রধানের সাথে। একবার কংস তার বোন দেবকীকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। 

পথিমধ্যে আকাশ হইতে কণ্ঠস্বর আসিল- 'হে কংস, যে দেবকীকে তুমি পরম মমতায় বয়ে বেড়াচ্ছ, তাহার মধ্যেই তোমার প্রাণ বিরাজ করে। তার গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া অষ্টম সন্তান তোমাকে হত্যা করবে। এ কথা শুনে কংস বাসুদেবকে হত্যা করতে প্রস্তুত হলেন। 

তখন দেবকী তাকে বিনয়ের সাথে বললেন - 'আমার গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে আমি আপনার সামনে উপস্থাপন করব। স্বামীকে মেরে লাভ কি? 

কংস দেবকীর পরামর্শে সম্মত হন এবং মথুরায় ফিরে আসেন। তিনি বাসুদেব ও দেবকীকে কারাগারে বন্দী করেন। বাসুদেব-দেবকী একে একে সাতটি সন্তানের জন্ম দেন এবং জন্মের সাথে সাথেই কংসের হাতে সাতটি সন্তানই মারা যায়। এখন অষ্টম সন্তানের জন্ম হতে চলেছে। কারাগারে তার ওপর কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করা হয়। একই সময়ে নন্দের স্ত্রী যশোদারও একটি সন্তান হতে চলেছে।

বাসুদেব ও দেবকীর অসুখী জীবন দেখে তিনি অষ্টম সন্তানকে রক্ষা করার একটি সমাধান বের করেন।

যে সময়ে বাসুদেব-দেবকীর গর্ভে একটি পুত্রের জন্ম হয়েছিল, কাকতালীয়ভাবে যশোদার গর্ভ থেকে একটি মেয়ের জন্ম হয়েছিল, যেটি 'মায়া' ছাড়া আর কিছুই ছিল না। 

আরো পড়ুনঃ- গোপাল ও কুমোরের ইচ্ছে নিয়ে কাহিনী!

হঠাৎ যে প্রকোষ্ঠে দেবকী-বাসুদেব বন্দী ছিলেন সেখানে আলো দেখা গেল এবং শঙ্খ, চক্র, গদা এবং পদ্ম ধারণ করে চতুর্ভুজা ভগবান শ্রী-বিষ্ণ তাদের সামনে উপস্থিত হলেন। দুজনেই ভগবানের পায়ে পড়ল। তখন ভগবান তাকে বললেন- এখন আমি আবার নবজাত শিশুর রূপ ধারণ করছি। 

তুমি এক্ষুনি আমাকে তোমার বন্ধু নন্দ মহারাজের বৃন্দাবনের গৃহে পাঠাও এবং সেখানে জন্ম নেওয়া কন্যা সন্তানটিকে এনে কংসের হাতে তুলে দাও। এই সময়ে পরিবেশ অনুকূল নয়। তারপরও চিন্তা করবেন না। রক্ষীরা জেগে থাকা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়বে, কারাগারের দরজা আপনাআপনি খুলে যাবে এবং প্রবল যমুনা আপনাকে পার হওয়ার পথ দেবে।' 

সেই সঙ্গে বাসুদেব কারাগার থেকে বেরিয়ে নবজাত শিশু শ্রী কৃষ্ণকে অতল যমুনা পার হয়ে নন্দজির বাড়িতে পৌঁছেন। সেখানে নবজাতক শিশুটিকে যশোদার কাছে রেখে তিনি মেয়েটিকে নিয়ে মথুরায় আসেন। কারাগারের ফটকগুলো আগের মতোই বন্ধ ছিল। 

এখন কংস খবর পেলেন যে বাসুদেব ও দেবকীর একটি সন্তানের জন্ম হয়েছে। 

তিনি কারাগারে গিয়ে দেবকীর হাত থেকে নবজাতক কন্যাটিকে ছিনিয়ে নিয়ে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মেয়েটি আকাশে উড়ে গেল এবং সেখান থেকে বলল - 'হে বোকা, আমাকে মেরে ফেললে কি হবে? যে তোমাকে, বদ করবে সে বৃন্দাবনে পৌঁছেছে। তিনি শীঘ্রই তোমাদের পাপের শাস্তি দেবেন।' তারপর থেকে 

গোকুলে শ্রীকৃষ্ণের লীলা শুরু হয়, সেখানে তিনি নন্দের বাড়িতে বড় হতে থাকেন। শৈশবেই তিনি অসুরদের বিনাশ করেন এবং গোপীদের সঙ্গে নানারকম লীলা করেন, যা ভক্তদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে আছে। শ্রীকৃষ্ণের এই লীলা কেবল মথুরা নয়, গোটা বিশ্বে ধর্ম এবং ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

জন্মাষ্টমীর সার্থকতা

জন্মাষ্টমী, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পরিচিত, হিন্দু ধর্মের একটি মহিমান্বিত এবং পবিত্র উৎসব। এই দিনটি কেবল শ্রীকৃষ্ণের জন্মের স্মরণ নয়, বরং তার জীবনের মূল্যবোধ, শিক্ষা এবং লীলার প্রতিফলন হিসেবে উদযাপিত হয়। জন্মাষ্টমীর সার্থকতা নির্ধারণ করে মানবজীবনের ধর্ম, ন্যায়, এবং আধ্যাত্মিকতার পথে অগ্রসর হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপের মাধ্যমে।

 ধর্ম এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম এবং তার জীবন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে যখন পৃথিবী পাপ এবং অন্যায়ে পরিপূর্ণ ছিল। কংসের মতো অত্যাচারী রাজা এবং তার মতো বহু দুরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন এবং তাদের বিনাশ করে ধর্ম এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন। জন্মাষ্টমী সেই মুহূর্তের স্মরণ যা আমাদের শেখায় যে সত্য এবং ধর্মের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।

ভক্তির প্রতি অঙ্গীকার

জন্মাষ্টমী শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, এটি ভক্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের পুনর্নবীকরণ। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম এবং তার লীলাগুলি ভক্তদের মনে গভীরভাবে প্রোথিত হয় এবং তাদের জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রেরণা জোগায়। এই দিনটিতে উপবাস পালন, ভগবৎ গীতার পাঠ, শ্রীকৃষ্ণের নাম সঙ্কীর্তন এবং মধ্যরাত্রে শ্রীকৃষ্ণের জন্মলীলার মহিমা স্মরণ করার মাধ্যমে ভক্তরা তাদের ভক্তির দৃঢ়তা প্রকাশ করেন।

আরো পড়ুনঃ- কেন সিদ্ধিদাতা গণেশ কে একদন্ত" বা এক দন্তবিশিষ্ট ভগবান বলা হয়?

জীবনের মূল্যবোধের উপলব্ধি

শ্রীকৃষ্ণের জীবন কেবল আধ্যাত্মিক শিক্ষা নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যবোধের একটি প্রতীক। জন্মাষ্টমী আমাদের জীবনে তার আদর্শগুলি বাস্তবায়িত করার একটি সুযোগ দেয়। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা যেমন, করুণা, প্রেম, সত্যবাদিতা, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।

আনন্দ এবং উৎসবের মাধ্যম

জন্মাষ্টমী একটি উদযাপন এবং আনন্দের সময়। এই দিনটি ভক্তদের হৃদয়ে আনন্দ এবং উচ্ছ্বাসের অনুভূতি জাগায়। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উপলক্ষে ভক্তরা তাদের ঘরবাড়ি সাজায়, মন্দিরে পূজা-অর্চনা করে, এবং নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এই আনন্দময় পরিবেশ ভক্তদের হৃদয়ে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসা এবং সেবার অনুভূতি জাগায়।

উপসংহার

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী কেবল তার জন্ম উদযাপনের দিন নয়, এটি ভক্তদের জন্য তার শিক্ষা ও আদর্শকে স্মরণ করার এবং তাদের জীবনে প্রয়োগ করার একটি অনন্য উপলক্ষ। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম লীলা, তার মহিমান্বিত জীবন, এবং তার আধ্যাত্মিক বার্তা মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণা ও সঠিক পথ প্রদর্শন করে। এই পবিত্র দিনে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গভীর ভক্তি ও ভালোবাসা জানিয়ে আমরা তার আর্শীবাদে জীবনকে আলোকিত করতে পারি।


Hindu Express Points, এর এই আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, এবং আর্টিকেলটি শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ