কেন সিদ্ধিদাতা গণেশ কে একদন্ত" বা এক দন্তবিশিষ্ট ভগবান বলা হয়?
ভগবান শ্রী শ্রী সিদ্ধিদাতা গনেশ |
গণেশ, হিন্দু ধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় দেবতা, যিনি বিশেষ করে "বিঘ্ননাশক" এবং "সিদ্ধিদাতা" হিসাবে পরিচিত। ভক্তগণ তাকে পূজা করে জীবনের সকল বাধা দূর করার জন্য এবং সফলতার জন্য আশীর্বাদ কামনা করেন। গণেশের এক দন্ত (একটি দাঁত) থাকা নিয়ে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। এই কাহিনীগুলি শুধুমাত্র গণেশের ভক্তি ও ক্ষমতার প্রতি ভক্তদের বিশ্বাসকে বাড়ায় না, বরং তার চরিত্রের নানা দিকও প্রকাশ করে। Hindu Express Points এর, এই আর্টিকেলে আমরা গণেশের এক দন্ত হওয়ার কাহিনীগুলি আলোচনা করব।
আরো পড়ুনঃ- জানুন শ্রী-গণেশের পাতালের রাজা হওয়ার কাহিনী!
পরশুরামের ক্রোধঃ~
পুরাণে এর পিছনে একটি গল্প রয়েছে, যা অনুসারে ভগবান বিষ্ণুর অবতার এবং শিবের একজন মহান ভক্ত ও শিষ্য পরশুরাম জিনি 17 বার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়দের নির্মূল করেছিলেন। একদিন পরশুরাম, ভগবান শিব এবং মা পার্বতী দর্শনের জন্য কৈলাস পর্বতে আসেন।
সেই সময় শিব ধ্যানরত ছিলেন, এবং গণেশ প্রবেশের পথে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গণেশ পারশুরামকে তার পিতা শিবের ধ্যান না ভাঙানোর জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। পারশুরাম, রাগে ক্রুদ্ধ হয়ে, তার পরশু (কুঠার) দিয়ে গণেশকে আঘাত করেন।
সেই আঘাতের ফলে গণেশের একটি দন্ত ভেঙে যায়। যেহেতু সেই পরশু শিবের উপহার ছিল, গণেশ তাকে সম্মান দেখানোর জন্য আঘাত সহ্য করেন এবং তার একটি দন্ত হারান। কুড়ালের আঘাতে ভগবান গণেশের দাঁত ভেঙে যায়।
এই আওয়াজ শুনে ভগবান শিব তাঁর ধ্যানের ভঙ্গি থেকে জেগে উঠলেন এবং দুজনকেই শান্ত করলেন। তখন থেকে ভগবান গণেশের একটি মাত্র দাঁত অবশিষ্ট ছিল এবং এভাবেই গণেশ "একদন্ত" বা এক দন্তবিশিষ্ট দেবতা হন।
আরো পড়ুনঃ- Hindu Mythology
ganesh photo ছবি: Pixabay |
মহাভারতের লেখকঃ~
আরেকটি কাহিনী মহাভারত রচনার সময়কালে ঘটে। মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারত রচনার জন্য গণেশকে লেখক হিসেবে বেছে নেন। গণেশ শর্ত দেন যে, বেদব্যাস কোনও বিরতি ছাড়াই গল্প বলবেন এবং তিনি কোনও শব্দ লিখতে থামবেন না। বেদব্যাস শর্ত মেনে নেন এবং শুরু করেন। লেখার সময়, গণেশের লেখনী ভেঙে যায়। এই চুক্তি ভঙ্গ না করতে গণেশ নিজের একটি দন্ত ভেঙে তা দিয়ে লেখা চালিয়ে যান। এই কাহিনী গণেশের নিষ্ঠা এবং প্রতিজ্ঞা পূরণের প্রতীক।
উপসংহারঃ~
গণেশের এক দন্ত হওয়ার কাহিনীগুলি তার ধৈর্য, প্রজ্ঞা, এবং কর্তব্যনিষ্ঠার প্রতীক। এই কাহিনীগুলি আমাদের জীবনে দায়িত্ব, শিষ্টাচার, এবং আস্থার গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গণেশের এক দন্ত, যেমন তিনি আমাদের জন্য বিঘ্ননাশক এবং সিদ্ধিদাতা, তেমনি আমাদের জীবনের প্রতিকূলতাগুলিকে পরাস্ত করার প্রতীক। এই কাহিনীগুলি গণেশের ঐশ্বরিক শক্তির মূর্ত প্রতীক এবং তার প্রতি ভক্তির প্রতিফলন। তার উপাসনা আমাদের জীবনে সাফল্য, সমৃদ্ধি এবং শান্তি আনতে সহায়ক হয়।
আরো পড়ুনঃ- শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের ব্রজবাসীদের সঙ্গে মিলন!
0 মন্তব্যসমূহ