মহালয়া হল দেবীপক্ষের সূচনা এবং পিতৃপক্ষের সমাপ্তি সূচক একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি, যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে পিতৃতর্পণ বা পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। মহালয়াতে পিতৃতর্পণ করার প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। বিশ্বাস করা হয় যে পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদে পরিবার কল্যাণ লাভ করে। তাই আজ Hindu Express points, এর এই আয়োজনে আমরা জানবো মহালয়া কি? পিতৃতর্পন কি? মহালয়াতেই কেন করা হয় পিতৃতর্পন?
দেবী দুর্গার চক্ষুদানের ছবি |
মহালয়া কি? পিতৃতর্পন কি? মহালয়াতেই কেন করা হয় পিতৃতর্পন?
Mahalaya and Pitru Tarpan: মহালয়া বা পিতৃপক্ষের দিন দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু। এই দিন পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবীপক্ষের শুরু। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসব পরবর্তী পূর্ণিমা (ভাদ্রপূর্ণিমা) তিথিতে এই পক্ষ সূচিত হয় এবং সমাপ্ত হয় সর্বপিতৃ অমাবস্যা বা মহালয়ার অমাবস্যা তিথিতে। বাঙ্গালি সমাজে পিতৃপক্ষের শেষদিন অর্থাৎ অমাবস্যা তিথির মহালয়ার দিন পিতৃতর্পণ করার রীতি আছে। সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়। এ সময় পিতৃপুরুষগণ সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকেন তাদের উত্তরপুরুষদের হাতে জল, পিণ্ড, ইত্যাদি পাবার জন্য। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে, প্রসিদ্ধ দান কারী, কর্ণের মৃত্যু হলে তার আত্মা স্বর্গে গমন করলে, স্বর্গে তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাবার হিসেবে দেওয়া হয়।
কর্ণ দেবরাজ ইন্দ্রকে এর ধরনের খাবার দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে ইন্দ্র বলেন, তিনি সারাজীবন স্বর্ণই দান করেছেন, কিন্তু পিতৃ পুরুষকে কোন প্রকারের খাবারই দেননি। তাই তাকে স্বর্গে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কর্ণকে, এ কারণে ১৬ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হল। কর্ণ যেই পক্ষে গেছে, সেই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত।
মহালয়ার দিনই পিতৃপক্ষের লাস্টের দিন। তাই এদিন খুব ভোরে পুরুষেরা গঙ্গা বা অন্য কোনো নদীর তীরে গিয়ে জলে নেমে কোশাকুশি, তিল, জল আদি বস্তু নিয়ে ব্রাহ্মণ গণের সাহায্যে পিতৃপুরুষকে তর্পণ করেন। বাৎসরিক শ্রাদ্ধ আচার আনুষ্ঠিকতা করতে যারা অক্ষম, তারা এই সর্বপিতৃ নামক অমাবস্যা বা মহালয়ায় তর্পণ, শ্রাদ্ধ, দান আদি করতে পারেন পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য। এই দিন গয়ায় শ্রাদ্ধ করলে বিশেষ পূর্ণ লাভ হয়ে থাকে। এবং ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পাদপদ্ম-চিহ্নধন্য গয়াধামে সমগ্র পিতৃপক্ষ জুড়ে মেলা চলে। এই দিন অতি প্রত্যুষে চণ্ডীপাঠ করার রীতি রয়েছে।
আরো পড়ুন:- কেন সৃষ্টির দেবতা বা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে পূজা করা হয় না?
FAQs
মহালয়া কথাটির অর্থ কি?
মহালয়া শব্দের অর্থ মহান আলয় বা আশ্রয়। 'মহালয়া' শব্দটি স্ত্রীবাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ এই দিনে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি হয় এবং অমাবস্যার অন্ধকার দূর হয় এবং উজ্জ্বল দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হয়, এবং মা দুর্গাই হল সেই মহান আলয় বা আশ্রয়।
মহালয়া কি শুভ?
শাস্ত্র অনুসারে, দুর্গাপূজার সাথে কোন সম্পর্কই নেই মহালয়ার। বরং, মহালয় বা সর্বপিতৃ অমাবস্যা হল প্রয়াত পূর্বপুরুষদের জন্য তর্পণ শ্রাদ্ধের দিন। অনেক পণ্ডিতের মতে, এটিকে 'শুভ' না বিবেচনা করাই উত্তম কারণ মহালয়াকে তর্পণ ও পার্বণ শ্রাদ্ধের অতিপ্রাকৃত কর্মকাণ্ডের তারিখ হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে।
বাড়িতে মহালয়া অমাবস্যা পূজা?
সূর্যোদয়ের সময় সূর্যকে জল নিবেদন করতে হবে এবং গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে হবে। পূর্বপুরুষদের স্মরণে পিপল গাছে জল, ফুল, দুধ, গঙ্গাজল ও কালো তিল নিবেদন করতে হবে। অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আশীর্বাদ প্রার্থনা করা উচিত।
মহালয়া অমাবস্যা ভালো নাকি খারাপ?
মহান দান দাতা কর্ণের মতে মহালয়া অমাবস্যা এই মানব জগতের জন্য প্রদত্ত বর হিসাবে বিবেচিত হয়,
মহালয়ায় কি কি করা হয়?
মহালয়া হল সেই দিন যখন দেবী দুর্গা পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। বাঙালিরা ঐতিহ্যগতভাবে দেবী মাহাত্ম্য (চণ্ডী) শাস্ত্র থেকে স্তোত্র পাঠ করার জন্য মহালয়ার দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে।
মহালয়ার অমাবস্যায় কি দান করবেন?
ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, এই সময়ে দান-দক্ষিনা যেমন অভাবগ্রস্তকে খাবার দেওয়া, পাখি ও পশুদের সেবা করা ইত্যাদিকে অত্যন্ত মহৎ বলে মনে করা হয়।
মহালয়ার অমাবস্যায় কি আমিষ খাওয়া যাবে?
মহালয়া অমাবস্যার দিনে আমিষ, অ্যালকোহল, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন এবং মুসুর ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ এটি একটি পবিত্র দিন। মানুষের শুধুমাত্র সাত্ত্বিক খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
আমাদের এই আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ!
আরো পড়ুন:- বিশ্বকর্মা পূজার ইতিহাস ও মাহাত্ম্য!
0 মন্তব্যসমূহ