মিত্রগণ, আপনারা সবাই জানেন যে রাবণ বধের পর ভগবান শ্রীরাম যখন অযোধ্যায় ফিরে আসেন, তখন তাঁর রাজ্য অভিষেক হয় এবং তাঁকে অযোধ্যার রাজা করা হয়। কিন্তু আপনারা কি জানেন? যে শ্রীরাম যেমন অযোধ্যার রাজা ছিলেন, তেমনি তাঁর ছোট ভাই শত্রুঘ্নও ছিলেন মথুরার রাজা! এই কথাটি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে গেছেন! কারণ মথুরার রাজার নাম শুনলেই যদি কোন নাম মনে আসে তা হল কংস.. যিনি ছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মামা।,
শ্রীরামের ছোট ভাই শত্রুঘ্ন কি মথুরার রাজা ছিলেন? |
শ্রীরামের ছোট ভাই শত্রুঘ্ন কি মথুরার রাজা ছিলেন? জানুন আসল কাহিনী!
এখন প্রশ্ন জাগে শত্রুঘ্ন কীভাবে হলেন মথুরার রাজা?
আসলে এই ঘটনাটি ঘটেছিল যখন, মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীরাম অযোধ্যার রাজা ছিলেন, সেই সময়ে তাঁর দরবার অযোধ্যার প্রজাদের জন্য সর্বদা খোলা ছিল.. প্রজাদের সুখ দুঃখ সহ যার যে সমস্যাই ছিল,. তারা এসে শ্রীরামকে জানাতেন,. একটি বিশেষ বিষয় ছিল যে, এই দরবারের দরজা শুধু অযোধ্যাবাসীর জন্য নয়, ভারতের সমস্ত মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল।একদিন হঠাৎ করে কিছু ঋষি-মুনি তাদের দুঃখ নিয়ে অযোধ্যার দরবারে এসেছিলেন… এবং তারা শ্রী রামের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। সেই ঋষিদের মধ্যে একজন ঋষি ছিলেন চবন ঋষি, উনি শ্রী রামকে বলেছিলেন, মহারাজ মথুরার রাজা লাভনাসুর অনেক উৎপাত করছে, তিনি মধু নামের এক রাক্ষসের পুত্র, তার অপার ক্ষমতা, তিনি সেখানে বসবাসরত ঋষি-মুনি ও তপস্বীদের হত্যা করে খায়,. এখন পর্যন্ত সে বহু নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে।
আমরা আমাদের আশে-পাশের অনেক রাজ্যের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে রাজি হয় নি,. এর কারণ হল লাভনাসুরের কাছে রয়েছে ভগবান শিবের আশ্চর্যজনক ত্রিশূল, তাই কোন রাজাই প্রস্তুত নয় তার সাথে শত্রুতা করতে।
শ্রীরাম তাকে ত্রিশূল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন এবং বললেন মহাদেবের এই ত্রিশূল কিভাবে পেল সে?
ঋষি চবন বল্লেন হে মহারাজ, লাভনাসুরের পিতা, মধু একজন রাক্ষস হলেও তিনি ছিলেন, খুবই ধর্মপরায়ণ একজন ধর্মপ্রাণ রাক্ষস, তিনি ব্রাহ্মণ ও অসহায়দের রক্ষা করে অনেক পুণ্য অর্জন করেছিলেন।. তাঁর ভক্তি ও তপস্যায় খুশি হয়ে মহাদেব তাঁকে তাঁর একটি দিব্য ত্রিশূল উপহার দিয়েছিলেন। ভগবান মহাদেব ত্রিশূল বের করে মধুকে বলেছিলেন যে, এই ত্রিশূল দিয়ে তুমি প্রতিটি যুদ্ধে জয়ী হবে.. এছাড়াও এই ত্রিশূল শত্রুকে হত্যা করে তোমার কাছেই ফিরে আসবে।
একথা শুনে দৈত্যরাজ মধু শিবজীকে বললেন, ভগবান, আমাকে এই বর দিন যে আমার মৃত্যুর পর এই ত্রিশূল সর্বদা আমার বংশে থাকবে, তখন মহাদেব তাঁকে এই বর দিতে অস্বীকার করে বললেন, দৈত্যরাজ, তবে আমি এই বর দিচ্ছি যে তুমি আমার এই ত্রিশূল তোমার মৃত্যুর পর তোমার এক ছেলেকে দিতে পারো, তবে মনে রেখো তোমার সেই ছেলের মৃত্যুর পর এই ত্রিশূল আমার কাছে ফিরে আসবে। এই কারণেই লাভনাসুরের সাথে কেউ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয়।..
ঋষিদের কষ্ট শুনে ভগবান শ্রীরাম অবিলম্বে শত্রুঘ্নকে মথুরায় গিয়ে লাভনাসুরের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন, তিনি শত্রুঘ্নকে ভগবান বিষ্ণুর সবচেয়ে শক্তিশালী তীর দিয়ে বললেন যে, শিবজির ত্রিশূল লাভনাসুরের সাথে না থাকলে তাকে আক্রমণ করার জন্য, শত্রুঘ্ন তার বড় ভাইয়ের আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে মথুরার উদ্দেশ্যে রওনা হন.. এবং সেখানে গিয়ে লাভনাসুরের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন।
উভয়ের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত, শত্রুঘ্ন একই তীর ব্যবহার করে লাভনাসুরকে হত্যা করেন এবং নিষ্ঠুর রাজার হাত থেকে প্রজাদের মুক্ত করেন… লাভনাসুরের মৃত্যুর পর, মহাদেবের ত্রিশূল তার কাছে ফিরে যায়।
কিন্তু লাভনাসুরের মৃত্যুর পর সেখানকার প্রজারা রাজাহীন হয়ে পড়েছিল, প্রজা ও রাজার মধ্যে সম্পর্ক ঠিক পিতা-সন্তানের মতোই, মথুরা বাসী রাজা হওয়ার অনুরোধ করলো, সবার খুশি দেখে ভগবান শ্রীরাম তার প্রিয় ভাই শত্রুঘ্নকে রাজা করলেন মথুরার, এবং এইভাবে পরাক্রমশালী শত্রুঘ্ন মথুরার রাজা হন।
আর্টিকেল টি শেয়ার করে অন্যদের কেউ পাঠ করার সুযোগ করে দিন|| ধন্যবাদ
0 মন্তব্যসমূহ